Type Here to Get Search Results !

বিসিএস এক মারাত্মক নেশার মত

বিসিএস বা সরকারি চাকুরির মোহ থেকে বের হযে আসুন।
বাংলাদেশের শিক্ষিত তরুণদের উদ্দেশ্যে কথাগুলো বলছি।দেশের জন্য করতে চাইলে সুস্থ ধারার রাজনীতি করুন, ব্যবসায়ী বা উদ্যোক্তা হবার চেষ্টা করেন, বেসরকারি চাকুরি বা অন্য যে কোন কিছু! কিন্তু শুধু বিসিএস বা সরকারি চাকুরিতে স্বপ্নটাকে আটকে রাখবেন না। সরকারি চাকুরি হলে অবশ্যই ভালো কিন্তু না হলে জীবন শেষ এই চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসুন। কেন সরকারি চাকুরির মোহ থেকে বেরিয়ে আসতে বলছি সেই আলোচনা করবো তার আগে বলে নেই বাংলাদেশের সরকারি চাকুরি বা বিসিএস পরীক্ষার ইতিহাসে আজকের দিনটা কালো দিন হয়ে থাকবে।
১৩ বছর আগে ২০১০ সালে প্রয়াত পিএসসির চেয়ারম্যান সা’দত হুসাইন বিসিএস থেকে ক্যাডারের পাশাপাশি প্রথম শ্রেণীর নন-ক্যাডার নিয়োগের জন্য যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন, ২০১৪ সালে আরেক চেয়ারম্যান ইকরাম আহমেদ যেখানে প্রথম শ্রেণীর সঙ্গে দ্বিতীয় শ্রেণীও যুক্ত করেছিলেন এবং ২০১৭ সালে ৩৪ তম বিসিএসে থেকে বিপুল পরিমান ছেলেমেয়ে নিয়োগ দিয়ে আরেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক যে অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছিলেন আজকের পিএসসি সেই পথটা রুদ্ধ করে দিলো। এর ফলে প্রতিটা বিসিএস থেকে বিপুল সংখ্যক ছেলেমেয়ের চাকুরি পাওয়ার যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল, কোন ধরনের তদবির ছাড়াই সরকারের বিভিন্ন দপ্তর যেভাবে মেধাবী ছেলেপেয়ে পাচ্ছিল আজকে সেই পথ রুদ্ধ হয়ে গেল। জানি না হটকারী এই সিদ্ধান্তে কার লাভ হলো, তবে দেশের বা চাকুরিপ্রার্থী তারুণ্যের যে কোন কল্যাণ হয়নি সেটা যতো সময় যাবে ততোই বুঝতে পারবে এই দেশ।   

৪৩ তম বিসিএস পরীক্ষা যারা দিয়েছিলেন এবং আপনারা যারা সরকারি চাকুরির পরীক্ষার্থী তারা নিশ্চয়ই জানেন, আজকে বিকেলে ৪৩ তম বিসিএসের ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। এই বিসিএসে বিভিন্ন ক্যাডারে ২ হাজার ১৬৩ জন নিয়োগ পেয়েছেন। তাদের সবাইকে অভিনন্দন। আর নন-ক্যাডার যে ৬৪২ জন নিয়োগ পেয়েছেন তাদেরও শুভেচ্ছা যদিও এর মধ্যে ২৭৪ জনেই পেয়ছেন ১২ তম গ্রেড এবং নবম ও দশম গ্রেডের যে পদগুলো ছেলেমেয়েরা পেয়েছেন তার বেশিরভাগই টেকনিকাল পদ। তারপরেও আপনারা একটা কিছু পেয়ছেন। কিন্তু আমার ভীষণ খারাপ লাগছে সেই সাত হাজার ছেলেমের জন্য যারা চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হয়েও এই বিসিএস থেকে শূণ্য হাতে ফিরলেন। আপনাদের মনের অবস্থাটা আমি খুব ভালো করে বুঝতে পারছি। 

সরকারি চাকুরির লড়াইয়ে আমি কখনো নামিনি কিন্তু গত ২০ বছর ধরে আপনাদের নিয়ে লেখালেখি করতে করতে আপনাদের মনের অবস্থাটা আমি বুঝি। আমি জানি সাড়ে চারলাখ ছেলেমেয়ের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে ৪৩ তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষার জন্য টিকেছিলেন সেই ৯ হাজার ৮৪১ জন কতোটা পরিশ্রম করেছেন। অংশ । আফসোস এই ৯ হাজার ৮৪১ জনের মধ্যে সাত হাজার ছেলেমেয়ে শূন্য হাতে ফিরলেন। এমন বঞ্চনার ঘটনা গত নয়টা বিসিএসের কোনটাতেই ঘটেনি। 

একটু পেছনে ফিরলেই দেখা যাবে, ৩৪ বিসিএসে নন-ক্যাডার থেকে ২ হাজার ২৫৭ জন, ৩৫ বিসিএস থেকে ২ হাজার, ৩৬ বিসিএস থেকে ১ হাজার ২৮৭ জন, ৩৭ বিসিএস থেকে ১ হাজার ৭৪৩ জন, ৩৮ তম বিসিএস থেকে তিন হাজার ৭৩ জন, ৪০ তম বিসিএস থেকে ৪ হাজার ৪৭৮ জন এবং ৪১তম বিসিএস থেকে ৪ হাজার ৫৩ জন নন ক্যাডারে নিয়োগে পেয়েছেন। অথচ আজকে ৪৩ তম বিসিএস থেকে মাত্র ছয়শজন নিয়োগ পেলেন।

সবচেয়ে বিস্ময়কর ও দুঃখজনক ব্যাপার হলো, ২৮ তম বিসিএস থেকে ক্যাডার পদের পাশাপাশি নন ক্যাডারেও ফল প্রকাশ করা হয়েছিল। এরপর নন ক্যাডারের তালিকা থেকে ধারবাহিকভাবে তরুণেরা চাকুরি পেয়েছেন পরবর্তী বিসিএসের ফল প্রকাশের আগ পর্যন্ত চাকুরি পাবার একটা সুযোগ ছিল। কিন্তু এবার সেই সুযোগ চিরতরে বন্ধ করতে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণদের তালিকাও প্রকাশ করেনি পিএসসি। 

আমি বলবো আগে পিএসসি চিন্তা করতো কীভাবে একটা ছেলেমেয়েকে বেশি চাকুরি দেওয়া যায়। আর সবদেখে মনে হচ্ছে এখন পিএসসি যেন ছেলেমেয়েদের বঞ্চিত করতেই কাজ করছে। এ যেন ভয়াবহ এক প্রতিহিংসা। পিএসসির চেয়ারম্যান যেন দেখে নিতে চাইছেন, তোমরা পিএসসির সামনে আন্দোলন করেছে আমিও তোমাদের দেখে নিচ্ছি। এটা মোটেও অভিভাবকসুলভ আচরণ নয়। 

আমি বলবো বর্তমান সরকারের ১৫ বছরে যে পিএসসি আস্থার একটা প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয়েছিল সেই পিএসসির প্রতি আস্থার একটা বড় চিড় ধরবে কোন সন্দেহ নেই। 

আমি অনেকদিন লিখেছি, বিসিএস থেকে নন-ক্যাডারে নিয়োগের বিষয়টা বুঝতে হলে ১৩ বছর আগে ফিরতে হবে। তখন একটা বিসিএসে দুই থেকে আড়াই লাখ প্রার্থী আবেদন করতেন এবং ছয় থেকে সাত হাজার প্রার্থী চূড়ান্ত উত্তীর্ণ হতেন। কিন্তু পদস্বল্পতার কারণে বেশির ভাগই চাকরিবঞ্চিত হতেন। এই প্রার্থীদের প্রথম শ্রেণির অন্যান্য শূন্য পদে নিয়োগ দেওয়ার জন্যই ২০১০ সালে নন-ক্যাডার নিয়োগে বিশেষ বিধিমালা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

নন-ক্যাডারের এই নিয়োগ বিধিমালা করার কারণ হিসেবে ওই সময়ের চেয়ারম্যান প্রয়াত সা’দত হুসাইন বলেছিলেন, একেকটি বিসিএসে ৮ থেকে ১০ হাজার প্রার্থী উত্তীর্ণ হলেও বেশির ভাগ চাকরি পান না। অন্যদিকে রাষ্ট্রের অনেক পদ শূন্য। বিসিএস উত্তীর্ণদের মধ্য থেকেই যদি প্রথম শ্রেণির বিভিন্ন পদে সুপারিশ করা যায়, তাহলে সরকারের বিভিন্ন দপ্তর মেধাবী কর্মকর্তা পাবে। বিসিএস থেকে নিয়োগ দিলে নিয়োগে অনিয়ম-দুর্নীতিও কমবে। ২০১৪ সালে বিধিমালা সংশোধন করে প্রথম শ্রেণির সঙ্গে দ্বিতীয় শ্রেণির পদেও বিসিএস থেকে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয় পিএসসির ওই সময়ের চেয়ারম্যান ইকরাম আহমেদ।

পিএসসি ও চাকরিপ্রার্থীদের নিয়ে দীর্ঘ দুই দশকের সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতায় বলতে পারি, বিসিএস উত্তীর্ণদের থেকে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা (বর্তমানে ৯ম থেকে ১২ গ্রেড) নিয়োগের জন্য নন-ক্যাডার নিয়োগ বিধিমালার উদ্যোগটি দারুণ ছিল। বিধিমালা অনুযায়ী, প্রতিটি বিসিএসে চূড়ান্ত ফল প্রকাশের পর প্রার্থীদের কাছ থেকে নন-ক্যাডারে আবেদন নেওয়া হতো। পরের বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশের আগপর্যন্ত বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে যত চাহিদা আসত, সেই অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া হতো। এভাবেই নন-ক্যাডারে বিপুলসংখ্যক ছেলেমেয়ে চাকরি পেয়েছেন।

কিন্তু সংকটের শুরু ৪০তম থেকে। ওই বিসিএসে এসে পিএসসি বলে, এখন থেকে বিসিএসের বিজ্ঞপ্তির তারিখ অনুযায়ী শূন্য পদ আলাদা করা হবে। এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, যেহেতু ৪০তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি ২০১৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর দেওয়া হয়েছে, কাজেই ওই তারিখের মধ্যে যেই পদের চাহিদা শুধু সেই পদই ৪০তম বিসিএসের নন-ক্যাডারের জন্য থাকার কথা। ৪০তম বিসিএস উত্তীর্ণ প্রার্থীরা তখন এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলন শুরু করেন। তাঁদের বক্তব্য, পিএসসির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে ৪০, ৪১, ৪৩ ও ৪৪তম নন-ক্যাডার প্রার্থীদের ওপর বিপর্যয় নেমে আসবে। 

হলোও তাই। ৪০ পার পেয়ে গেলেও ৪১ তম বিসিএসে অনেক ছেলেমেয়ে বঞ্চিত হলো। আর আজেকে ৪৩ তম বিসিএসে তো নন ক্যাডাররা ফলাফলই পেল না। মন খারাপ করে অনেক ছেলেমেয়ে আমাকে ইনবক্স করেছেন। আপনাদের জন্য আমার ভীষণ খারাপ লাগছে। আপনারা গত সপ্তায় যখন আপনারা বিষয়টা জানেন আমি তারপর দ্রুত এ নিয়ে লেখার উদ্যোগ নেই। ফেসবুকের পাশাপাশি পত্রিকার মতামত কলামেও আমি বিষয়টা নিয়ে লিখেছি। 

পিএসসির বর্তমান চেয়ারম্যান ও কয়েকজন সদস্যের ইনবক্সেও আমি লেখাগুলো পাঠিয়ে বলেছি, বিসিএস থেকে নন-ক্যাডারের নিয়োগে অনেক অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ হয়েছে। যোগ্য ছেলেমেয়েরা বিভিন্ন দপ্তরে যাচ্ছেন। কাজেই ৯ম থেকে ১২তম গ্রেড পর্যন্ত যত বেশিসংখ্যক পদ বিসিএস থেকে নিয়োগ দেওয়া যায়, ততই রাষ্ট্রের মঙ্গল। এখানে আইন বা বিধিমালা বেশি প্রার্থীর চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা হওয়া উচিত নয়; বরং বেশি নিয়োগ দেওয়ার জন্য পিএসসির চেষ্টা করা উচিত। প্রয়োজনে বিসিএস উত্তীর্ণ সবাইকে চাকরি দেওয়া হোক। আপনারা প্লিজ বিসিএস থেকে নন ক্যাডার নিয়োগের পথটা সংকুচিত করে ফেলবেন না। আফসোস আমার তারা বিষয়টা বুঝলেন না!  

পুরো বিষয়টা যেন প্রতিহিংসা! এই কমিশন দেখেন একেক বিসিএসে একেকরকম নিয়ম করছে। আবার নিজেরাই নিজেদের বিধি ভাঙছে। এই যে দেখেন, ২০২৩ সালের জুন মাসে নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ (বিশেষ) সংশোধিত বিধিমালা অনুযায়ী, এখন থেকে বিসিএসের বিজ্ঞপ্তিতে ক্যাডার পদের পাশাপাশি নন-ক্যাডার পদের সংখ্যাও উল্লেখ থাকবে। অথচ গত ৩০ নভেম্বর ৪৬তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলেও নন-ক্যাডারের সংখ্যা বলা হয়নি। এর দায় কার?

আমি আমার লেখায় বলেছি, আগের যে নিয়ম মানে প্রতিটি বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশের পর পিএসসি যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে শূন্য পদের চাহিদা চেয়ে চিঠি ও তাগাদা দিতো তাতে অনেক পদ আসতো। পাশাপাশি প্রার্থীরাও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে গিয়ে খোঁজখবর করতেন এবং চাহিদা পাঠানোর অনুরোধ করতেন। ফলে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তর থেকে অনেক চাহিদা যেত। এখন ক্যাডারের সঙ্গেই নন-ক্যাডারের ফল প্রকাশ করে সেই পথটা রুদ্ধ করে দেয়া হলো। 

অথচ ক্যাডার ও নন-ক্যাডার ফল পৃথক সময়ে প্রকাশ করলে নন-ক্যাডার থেকে অধিকসংখ্যক প্রার্থীকে সুপারিশ করলে, আগের বিসিএস থেকে ইতিমধ্যে সুপারিশ করা প্রার্থীদের সমপদে ফের সুপারিশ না করলে এবং ক্যাডার ও নন-ক্যাডার নিয়োগে প্যানেলের ব্যবস্থা করলে হাজার হাজার ছেলেমেয়ে উপকৃত হতো। কিন্তু পিএসসি ছেলেমেয়েদের স্বার্থের কথা চিন্তা করলো না। 

অথচ দেখেন পিএসসি কিন্তু তার নিজের দায়িত্বটা ঠিক মতো পালন করতে পারছে না। একেকটা বিসিএসে এখন তিন থেকে চার বছর সময় নেওয়া হচ্ছে। এগুলো কিন্তু গোটা পৃথিবীর মধ্যে রেকর্ড। অথচ পিএসসির বর্তমান চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে যোগ দেওয়ার পরপরই বলেছিলেন, এক বছরের মধ্যেই একটা বিসিএসে নিয়োগ শেষ করা হবে। এ জন্য তিনি রোডম্যাপ করার কথাও বলেছিলেন। পিএসসির বার্ষিক প্রতিবেদনে যান। মাননীয় রাষ্ট্রপতি ও সংসদে দেওয়া সেই প্রতিবেদনেও এক বছরের মধ্যেই একটা বিসিএসে নিয়োগ শেষ করার কথা বলা। অথচ বাস্তবতা আপনারা সবাই জানেন।

আফসোস আমার পিএসসি নিয়ে আজকাল যে সাংবাদিকতা হয় তাতে একজন সাংবাদিক হিসেবে নিজেই লজ্জা পাই। মনে হয় পিএসসির পিআরওগিরি করতে নেমেছে তারা। অথচ সাংবাদিকতার শর্ত অনুযায়ী পিএসসিকে প্রশ্ন করার কথা। চাকুরিপ্রার্থীদের ভাবনাগুলো গণমাধ্যমে প্রতফলিত হওয়ার কথা। প্রশ্ন করার কথা, রোডম্যাপ অনুযায়ী কেন এক বছরেই বিসিএস শেষ হচ্ছে না। 

এই যে এক বছরে নিয়োগ শেষ করা তো পরের কথা, লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করতেই এক বছরের বেশি সময় লেগে যাচ্ছে এর দায় কার? এই দেশে লাখ লাখ ছেলেমেয়ের এসএসসি, এইচএসসিসহ নানা পরীক্ষার ফল যদি তিন মাসে দেওয়া যায় ১০ হাজার ছেলেমেয়ের খাতা দেখে ফল প্রকাশ করতে এক বছর লাগবে কেন? না আমাদের মূল ধারার অধিকাংশ সাংবাদিক এই প্রশ্নগুলো করা ভুলে গিয়েছে।  

যাই হোক আমি আমার লেখার শুরুতে ফিরি। আমি জানি সুযোগ-সুবিধা ও মর্যাদা বাড়ার পাশাপাশি নিয়োগে স্বচ্ছতা থাকে বলে চাকরিপ্রার্থীদের বিসিএস নিয়ে আগ্রহের শেষ নেই। একেকটা বিসিএস পরীক্ষায় এখন ৪ লাখেরও বেশি পরীক্ষার্থী অংশ নিচ্ছেন। গত ২০ বছরে এই দেশে বিসিএস নিয়ে একটা উম্মাদনা শুরু হয়েছে। ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া বাদ দিয়ে সবাই বিসিএসমুখী। সবাই একটা সরকারি চাকুরি চায়। 

দেখেন বিসিএস আর পিএসসি নিয়ে বাংলাদেশে আমার চেয়ে বেশি প্রতিবেদন কেউ করেনি। আমার উদ্দেশ্যে ছিলো পিএসসিকে ঘিরে অতীতে যতো অনিয়ম দুর্নীতি হয়েছিল সেগুলো বন্ধ করে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করা। আমি কে প্রথম কে দ্বিতীয় হলো সেসব নিয়ে উম্মাদনা দেখাইনি। কিন্তু এখন বিসিএস মানেই একটা উম্মাদনা। এই উম্মাদনা জাতির জন্য ক্ষতিকর। এখন থেকে বের হতে হবে।

আমাকে এই কয়েক ঘণ্টা আগে একজন পুলিশ সুপার ফোন দিয়েছেন যাকে আমি একজন ভালো মানুষ হিসেবে চিনি। তিনি আমাকে বলেছেন, শরিফ ভাই আমাদের তারুণ্যকে বিসিএসের উম্মাদনা থেকে বের করতে হবে। শুধু একটা সনদ আর সরকারি চাকরির এই উম্মাদনা দেশকে কিছু দিতে পারে না। আপনি প্লিজ লিখেন,
সরকারি চাকুরি আর দশটা চাকুরির মতোই একটা চাকুরি। এজন্য জীবনের সবকিছু শেষ করে ফেলার মানে নেই। 

আসলেই তাই। আমি গত ১০-১৫ বছর ধরে দেখছি অনেকে সরকারি চাকুরির আশায় তারুণ্য শেষ করে ফেলছে। ডাক্তার প্রকৌশলী সবাই এখন প্রশাসন বা পুলিশ ক্যাডার হতে চান। কিন্তু কেন রে ভাই? সরকারি চাকুরি ছাড়া আর কিছু নেই জীবনে?

আবারো বলছি, সরকারি চাকুরির জন্য আপনি চেষ্টা করতেই পারেন কিন্তু সেটাই জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য হতে পারে না। দেখেন একেকটা বিসিএস দেবে চারলাখ। চাকুরি পাবে মাত্র দুই থেকে তিন হাজার। আপনি যতো ভালোই হন, ২০-২৪ ঘণ্টা যতোই লেখাপড়া করেন বেশিরভাগই চাকুরি পাবেন না এটাই স্বাভাবিক। কাজেই সরকারি চাকুরির উদ্দেশ্যে জীবনটা শেষ করে দেওয়ার মানে নেই। 

আরেকটা কথা, আপনি যদি মনে করেন সরকারি চাকুরি করে দেশ জাতির বিরাট কিছু করে ফেলবেন সেটি ভুল ধারণা। গত ৫০ বছরে কতো হাজার লোক বিসিএস ক্যাডার হয়েছে আবার অবসরে গিয়েছে কয়জনকে মানুষ মনে রেখেছে? আপনি অবসরপ্রাপ্ত একজন সচিবের কাছে যান। কয়জন বলবে সে তার জীবন নিয়ে সুখী? কয়জন বলবে আমি দেশ জাতির জন্য কিছু করতে পেরেছি। 

দেখেন, দেশ জাতির জন্য আসলেই কিছু করতে চান সবার আগে সুস্থ ধারার রাজনীতি করেন। পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখেন। দেখেন একটা দেশের রাজনীতি ভালো না হলে কিছুই ভালো হবে না। কাজেই আমলাতন্ত্র, বিচার বিভাগ, পুলিশ, ব্যবসায়ী কাউকে গালি দিয়ে লাভ নেই। সবার আগে সুস্থ ধারার রাজনীতি করতে হবে। আপনি বলবেন বর্তমান রাজনীতি আপনার ভালো লাগছে না? কিন্তু আকাশ থেকে তো কোন ফেরেশতা নেমে এই রাজনীতি ঠিক করবে না। আপনাকে আমাকেই এই রাজনীতি ঠিক করতে হবে। 

রাজনীতি করতে চাইছেন না? ঠিক আছে ব্যবসা করেন। বড় না হোক ছোটখাটো ব্যবসা। ভালো ব্যবসা। উদ্যোক্তা হন। ছোট থেকে শুরু করেন। সাহস করেন। দেখবেন একদিন অনেক মানুষ আপনার প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে। অনেকের রিজিকের মাধ্যম হয়েছেন আপনি। ব্যবসা করতে না চাইলে বেসরকারি চাকুরি করেন। গান লিখেন। কবিতা। যা ভালো লাগে করেন। কিন্তু শুধু একটা সরকারি চাকুরির আশায় জীবনটা শেষ করে দেবেন না প্লিজ। পৃথিবীর আর কোথাও সরকারি চাকুরির প্রতি এই মোহ পাবেন না। 

আমি শুধু ৪৩ বিসিএসের সাত হাজার ছেলেমেয়েকে স্বান্ত্বনা দিতে এই কথাগুলো বলছি না। আপনাদের সঙ্গে যে অন্যায় হলো, আজকে পিএসসি যা করলো একদিন সাধারণ তরুণরাই এর জবাব দেবে। চিরদিন কেউ চেয়ারে বসে থাকে না। এই দেশে চেয়ার ছাড়ার পর বহুজনের দিকে কেউ ফিরেও তাকায় না। আবার অনেকেই তার কাজ দিয়ে ভালোবাসা দিয়ে মানুষের মনে জায়গা করে নেন। এই শ্রদ্ধা ভালোবাসাটাই বড়। 

দেখেন গত এক দশকে একদল মোটিভেশনাল স্পিকারের নামে আপনাকে সাফল্য মানে সম্পদ গাড়ি বাড়ি বানানো শেখাচ্ছে। কিন্তু মানুষের ভালোবাসার চেয়ে বড় কোন সম্পদ নেই। সৎভাবে সাধারণভাবে বাঁচার চেয়ে বড় কোন আনন্দ নেই। মানুষের কল্যানটাই আসল। মানুষ হওয়াটাই আসল। দেখেন একটা কথা মনে রাখবেন, আপনার চারপাশে যতো সফল মানুষ দেখেন দেখবেন বেশিরভাগই সরকারি চাকুরি করে না। দেখেন এই দেশটা ঠিক করতে হলে সব পেশায় ভালো লোক লাগবে। সবচেয়ে বেশি লাগবে ভালো মানুষ। কাজেই আপনাদের দোহাই লাগে সরকারি চাকুরির উম্মাদনা বন্ধ করুন। আবারো বলছি, রাজনীতি, ব্যবসা, উদ্যোক্তা বা যা ভালো লাগে করুন। শুধু সত্যিকারের মানুষ হন। 

আপনারা যে কেউ চাইলে আমার সাথে কথা বলতে পারেন। আমি রোজ হাজার হাজার মেসেজ পাই ইনবক্সেও, মোবাইলে। আমি চেষ্টা করি সবার সঙ্গে কথা বলতে। আমি এই চেষ্টা অব্যাহত রাখেবো শত ব্যস্ততার পরেও। কারণ অমি বিশ্বাস করি তারুণ্যই পারে এই দেশকে এগিয়ে নিতে। আমি বিশ্বাস করি মানুষ হিসেবে আরেকজন মানুষের পাশে দাঁড়ানোটাই জীবন। কাজেই চলুন আমরা সবাই মানুষ হই। মানুষের পাশে দাঁড়াই। আপনাদের সবার জন্য ভালোবাসা! ভালোবাসা তারুণ্যের জন্য। ভালোবাসি বাংলাদেশ!

লেখক 

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Search This Blog